ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলা এখন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চা অরেঞ্জ ভ্যালিতে পাওয়া যাচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরে দার্জিলিং জাতের কমলা উৎপাদন করে দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এলাকার আবু জাহিদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল নামে এক বাগান মালিক। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন দর্শণার্থীদের জন্য ঘুরাফেরার মনোরম পরিবেশ।
গত ২০ নভেম্বর দর্শণার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এলাকায়।
মালঞ্চা গ্রামের আড়াই বিঘা জমির ওপর ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা আবু জাহিদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল। বাগানটিতে আড়াইশোর মতো কমলাগাছ রয়েছে। তার এ বাগানের গাছে এবার কিছুটা কম কমলা ধরেছে। তবে কমলার আকার অন্যবারের চেয়ে বড়।
অরেঞ্জ ভ্যালিতে গিয়ে দেখা যায়, গাছের ডালে ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে ছোট-বড় কমলা। কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। কমলার পাশাপাশি এবার সেখানে চাষ করা হয়েছে মাল্টাও। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাল্টার আবাদ করা হলেও সবখানেই দেখা গেছে সবুজ রংয়ের কিন্তু এখানকার মালটাও কমলা ও সবুজ রঙের। সবুজ রঙের মাল্টাগুলো কিছুটা টক হলেও হলুদ জাতের এই মাল্টাগুলো দারুণ মিষ্টি। নয়নাভিরাম এ কমলা বাগান দেখতে প্রথম দিন থেকেই দেখা মিলছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো দর্শনার্থীর।
মিষ্টি ও রসালো এ কমলা ও মাল্টা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। তবে বাগান মালিক আশা করছেন ফলন কম হলেও দামে এবার তা পুষিয়ে যাবে। বাগান থেকে এবার প্রায় ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার কেজি কমলা বিক্রি হবে বলে মনে করছেন বাগান মালিক।
বাগান মালিক জুয়েল জানান, আনুমানিক ৩০ লাখ টাকার কমলা ও মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি জানান, গত ১১ বছর আগে ঠাকুরগাঁও জেলা হর্টিকালচার থেকে প্রতিটি চারা ৫ টাকা দরে কিনে রোপণ করেন। যদিও তার এ বাগান করার ইচ্ছা ছিল না। শুধু হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তাদের অনুরোধে তিনি কমলার চারাগুলো কিনেছিলেন। এখন সেই আড়াইশো গাছ থেকে বার্ষিক প্রায় ৩০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করছেন তিনি।
উদ্যোক্তা জুয়েল বলেন, ‘আমার বাগানে দার্জিলিং জাতের কমলা ও বারী-৪ জাতের হলুদ রঙের মাল্টা চাষ হয়। এ বাগানের কমলা ও মাল্টা স্বাদে দার্জিলিংয়ের কমলা ও মাল্টার মতো। অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি এ বাগান করেছেন। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বাগানের কমলা ৪০০ ও মাল্টা ৩০০ গাছ রয়েছে। এবার ১০ হাজার কেজি কমলা ও ৭ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।’
তিনি জানান, ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলাগাছ ৫০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এটি অর্থকরী ফসল, যা খুব সহজে ও স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায়।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি এমন বাগান করতে চায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে কমলা চাষ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।
বাগানে ঘুরতে আসা দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ এলাকার মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সপরিবারের ঘুরতে এসেছি, সত্যিই ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে জুয়েল সাহেব একটি অনন্য উদহারণ সৃষ্টি করছেন। যেমন কমলাগুলো দেখতে সুন্দর, তেমনি রসালো, সুস্বাদু ও মিষ্টি।’
কড়া নিরাপত্তাসহ বাগানে প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা রয়েছে। বাগানের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি দর্শণার্থীরা যাতে ক্লান্তি দূর করতে পারেন, সেজন্য এবার বাগানে ক্যাফে যুক্ত করা হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্লেজোন। রয়েছে গাছ দিয়ে সাজানো অসংখ্য সেলফি বুথ।